সর্বশেষ

আজ হিমালয় জয়ের সামনে মেয়েরা

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'হাতে চ্যাম্পিয়ন লেখা ট্রফি, মুখে হাসি। রোববার কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের এই হাসিই বর্তমান বাংলাদেশের ফুটবলের প্রতিচ্ছবি। সোমবার রঙ্গশালার এই মাঠেই রাতের আঁধারে আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন বাংলাদেশের মেয়েদের। শুধু স্বপ্ন নয়, ইতিহাস গড়ার মঞ্চও হিমালয়ের দেশে। অতীতের তিক্ততা ভুলে নেপালেই উঠবে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন সূর্য- এই প্রত্যাশা কোটি বাঙালির।'
 

'বাংলাদেশ সময় বিকেল সোয়া ৫টায় শুরু হতে যাওয়া নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সাবিনাদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপাল। আজ দু'দলই ঝাঁপিয়ে পড়বে প্রথম শিরোপার স্বাদ নিতে। শুক্রবার ভারতের বিদায়েই নিশ্চিত হয়ে যায় মেয়েদের সাফে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল। এই প্রথমের স্বাদ পেতে মরিয়া গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। স্বপ্নের নীড়ে পাখি যেমন বাসা বাঁধে, তেমনি করে মেয়েদের হাত ধরে ফুটবলেও স্বপ্নিল ঠিকানার শেষ সিঁড়িতে লাল-সবুজের দেশটি। এই স্বপ্নের জাল বুনছেন তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে গড়া একদল নারী। যাঁদের রয়েছে উত্তুঙ্গ আত্মবিশ্বাস, শক্ত মনোবল, একাগ্রতা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি। একসঙ্গে দীর্ঘদিন এক ছাদের নিচে থাকা মারিয়া মান্ডা-মনিকা চাকমারা যে এখন প্রতিপক্ষের জন্য বড় আতঙ্ক। বয়সভিত্তিক সাফে তহুরা খাতুন-ঋতুপূর্ণ চাকমারা অনেকবারই উড়িয়েছিলেন বিজয়ের কেতন। লিখেছেন একের পর এক কাব্য। কিন্তু ফুটবলে সবচেয়ে আলোচিত জাতীয় দলের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সাবিনাদের গল্পটি একরাশ হতাশা আর হৃদয়ভাঙার। ২০১০ সালে কক্সবাজার থেকে নারী সাফের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, দেখতে দেখতে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ছয়ে।'


'আগের পাঁচবারের মধ্যে ২০১৬ সালে শিলিগুড়ি সাফে ট্রফি ছোঁয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ভারতের কাছে ফাইনালে হেরে কেঁদেছিলেন সিরাত জাহান স্বপ্না-কৃষ্ণা রানী সরকাররা। অপ্রতিরোধ্য, অজেয় সেই ভারতকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে কিনা এবার টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের রাস্তাটি দেখিয়ে দেয় ছোটনের দল। নেপালের কাছে শেষ চারে হেরে চূড়ান্ত বিদায় হয়েছিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের। মেয়েদের ফুটবলে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে প্রথমবার ভারতকে হারানোর সুখস্মৃতি নিয়ে সেমিফাইনালে ভুটানকেও গুঁড়িয়ে দেয় আট গোলে।'
 

'আর এবার শিরোপামঞ্চে দুটি 'প্রথম'-এর হাতছানি বাংলাদেশের। প্রথমবার নেপালকে হারানোর গল্প লেখার সঙ্গে প্রথম শিরোপার হাতছানি মেয়েদের। অতীতে আটবারের সাক্ষাতে (ছয় হার, দুই ড্র) কখনোই হিমালয়ের দেশকে হারাতে না পারা বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি যে ইতিহাস বদলানোর। র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১৪৭) চেয়ে ৪৫ ধাপ এগিয়ে নেপাল (১০২); কিন্তু টুর্নামেন্টে প্রথমবার টানা চার জয়ে এই দলটিই যে আত্মবিশ্বাসী।' বাঁকবদলের এই সাফে নতুন ইতিহাসের দুয়ারে দু'দল। ফাইনালে ওঠা দু'দলই হজম করেনি কোনো গোল। তবে স্বপ্না-সাবিনাদের শক্তিশালী আক্রমণের জবাব দিতে পারেনি কোনো দল। প্রতিপক্ষের জালে ২০ বার বল পাঠিয়েছে মেয়েরা। নেপালও নিজেদের জাল অক্ষত রেখেছে, তবে বাংলাদেশের চেয়ে কম গোল দিয়েছে স্বাগতিকরা (১৩ গোল)। শুধু আক্রমণেই নয়, মধ্যমাঠে মনিকা-মারিয়ার আধিপত্যে ফরোয়ার্ডদের গোলের রাস্তাটাও পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। আর রক্ষণে আঁখি খাতুন-মাসুরা পারভীন দেখিয়েছেন নিজেদের প্রতিভা। গোলপোস্টের নিচে চার ম্যাচেই রুপ্না চাকমা ছিলেন আস্থার প্রতীক। তবে আজকের স্নায়ুর ফাইনালে বাংলাদেশের রক্ষণ এবং গোলরক্ষককে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন নেপাল তথা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার সাবিত্রা ভান্ডারি।'


'২০১৯ সালে বিরাটনগর সাফের গ্রুপ পর্বে এই সাবিত্রাকে থামাতে গিয়ে সব এলোমেলো হয়েছিল ছোটনের শিষ্যদের। মাসুরা করে বসেন আত্মঘাতী গোল। তিন বছর আগের সেই দুঃখ এবার ভুলে দেশের ফুটবলে ঐতিহাসিক দিন এনে দিতে চান কোচ ছোটন।

আজ হিমালয় জয়ের সামনে মেয়েরা

গতকাল ম্যাচ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে আত্মবিশ্বাসের সুর, 'নেপালের বিপক্ষে অতীতে জিততে পারিনি। বিগত দিনে কী হয়েছে, না হয়েছে- তা নিয়ে ভাবছি না। ভারতের সঙ্গে আগে কখনোই জিতিনি।'
 

'এবার কিন্তু তাদের হারিয়েছি। কাল (আজ) আরেকটি দিন। যদি মেয়েরা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, আমার বিশ্বাস- নেপালের মাটিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে বাংলাদেশ।' দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ এই আসরে বাংলাদেশ সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ছেলেদের হাত ধরে ২০০৩ সালে। সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিলেন আমিনুল হক-আলফাজরা। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে টুর্নামেন্ট জিততে না পারা সেই ট্রফিতে এখন মরচে ধরেছে। অনেকে ভুলেই গিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশ কবে সেরা হয়েছিল। সেই ভুলে যাওয়া স্বাদটি নতুন করে কোটি বাঙালিকে এনে দিতে চান সাবিনারা। ফুটবলের ঝান্ডা ওড়ানো এই মেয়েদের হাত ধরেই ভাঙুক দীর্ঘদিনের শিরোপা-খরা।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত